বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কুড়িগ্রামে পুলিশের চাকরি পেলেন ৬০ মেধাবী শিক্ষার্থী মঠবাড়িয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন ও আইনি প্রতিকারের দাবিতে স্মারকলিপি নাশকতার মামলায় নড়াইল জেলা আ’লীগের সভাপতিকে কারাগারে প্রেরণ বাংলাদেশকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার দিচ্ছে রাশিয়া জনগন যাতে সকল ক্ষমতার মালিক হতে পারেন তেমন দেশ গড়তে চাই : প্রধান উপদেষ্টা কুড়িগ্রামে ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র নেয়ার অভিযোগ ফরিদপুরে টিআরসি নিয়োগের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম রিয়াদে সংবর্ধিত ছাত্র আন্দোলনে শহীদ বেনাপোলের আব্দুল্লাহ’র বাড়িতে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক

দু’শ’ বছরের বিখ্যাত “মন্ডা” পুরাতন পদ্ধতিতে তৈরী হচ্ছে মুক্তাগাছায়

দু'শ' বছরের বিখ্যাত "মন্ডা" পুরাতন পদ্ধতিতে তৈরী হচ্ছে মুক্তাগাছায়

মীর সবুর আহম্মেদ, মুক্তাগাছা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ১৮২৪ সালে রামগোপাল পাল প্রথম তৈরী করেন মণ্ডা। এই মন্ডা তৈরীর রেসিপি তিনি পেয়েছিলেন স্বপ্নে। সেই থেকে শুরু। এখনো এই জগৎ বিখ্যাত মন্ডা তৈরী হচ্ছে ২০০ বছরের পুরাতন পদ্ধতিতেই। দুধ চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মণ্ডার দাম। তাতেও কমেনি মণ্ডাপ্রেমীদের ভীড়।

ঐতিহ্যবাহী মণ্ডা খেতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ছুটে আসেন মুক্তাগাছায়। ২৬তম জি আই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে মুক্তাগাছার মণ্ডা। বর্তমানে গোপাল পাল পরিবারের পঞ্চম বংশধর শ্রী রামেন্দ্রনাথ পালের ভ্রাতৃদ্বয় এই মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করলেও দুইশত বছরের ঐতিহ্যের এই মণ্ডার জনক রাম গোপাল পাল।

মুক্তাগাছা থানার তারাটী গ্রামের নিবাসী গোপাল পালের তৈরীকৃত এই মিষ্টান্নের প্রথম স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। এরপর এটি জমিদারবাড়ির দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় জায়গা করে নেয়। জমিদারেরা উপহার হিসেবে বিশিষ্টজনদের কাছে মন্ডা পাঠাতেন।

জানা গিয়েছে, গোপাল পাল তার স্বপ্নে প্রায়ই এক সাধুর দেখা পেতেন। স্বপ্নে সাধু তাকে মণ্ডা তৈরির নিয়মাবলি শেখাতেন। এরপর গোপালকে সাধু বলেছিলেন, “তুই এই মণ্ডার জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করবি।” এই স্বপ্নের আক্ষরিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শৈল্পিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই।

গোপাল পালের বংশধর মিথুন পাল দৈনিক প্রলয়কে বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সকল ধরনের কলাকৌশল ব্যবহার করে যাচ্ছি। এমনকি পুরাতন কারিগরের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই মণ্ডা তৈরি করা হয়। ছানার সন্দেশের মতন এই মিষ্টি তৈরি-করণে ব্যবহার করা হয় দুধের ছানা ও চিনি। সারাবছর চিনির সাদা মণ্ডা বিক্রি হয় ৭০০ টাকা কেজি দরে।শীতের মৌসুমে চাহিদা বাড়ে খেজুরের গুড়ের তৈরী মন্ডার। যা বিক্রি হয় ৮০০ টাকা কেজি দরে। কেজিতে অন্তত ২০টি মণ্ডা থাকে।

মণ্ডা খেতে আসা অনেকেই জানান, মিষ্টির থেকে মণ্ডা তাদের কাছে বেশি ভালো লাগে। ঐতিহ্যবাহীতার সাথে এর স্বাদের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। রাজবাড়ী ঘুরতে এসে এই মিষ্টান্নের স্বাদ নিতে না পারলে ভ্রমণ বৃথা।

স্থানীয়রা বলেন, জমিদার কাল থেকে এই এলাকায় মণ্ডা হয়ে আসছে। তাদের ছোটবেলা থেকেই এই মিঠাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তবে এর দাম প্রতিবছর অযুক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়। প্রশাসন থেকে একবার জরিমানা ও দাম কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম লুৎফর রহমান অভিযান পরিচালনা করে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছিলেন, আমরা খুশিও হয়েছিলাম। আমাদের অতিথি আপ্যায়নে সবসময়ই মন্ডা থাকে।

মাওলানা ভাসানি, শেখ মুজিবুর রহমান, প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এমনকি ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ নিজেও মুক্তাগাছার মন্ডা খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। বর্তমানেও এর সুখ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । দৈনিক প্রলয়